দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই ঈদকে সামনে রেখে খুলেছে দেশের জনপ্রিয় ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল ব্র্যান্ড আড়ং। সংকটময় এ মুহূর্তে বসুন্ধরা, যমুনা ফিউচার পার্ক, নিউমার্কেটসহ দেশের অন্যান্য বড় বড় শপিংমলগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও আড়ং তাদের আউটলেটগুলো খুলেছে। তবে শোরুমগুলো খোলার পরপরই সমালোচনার মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব না মানার বিষয়টি ভয়ংকর বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। ক্রেতাদের সামাজিক দূরত্ব মানাতে ব্যর্থ হওয়ায় আমাদের সময়ের কাছে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে আড়ং কর্তৃপক্ষ।
এ পরিস্থিতিতে আড়ং খোলার সিদ্ধান্তকে অনেকটা আত্মঘাতী বলে মনে করছেন আড়ংয়ের ক্রেতাসহ অন্যান্যরা। অপরদিকে আড়ং কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের সঙ্গে জড়িত হাজার হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ও কারুশিল্পীদের বাঁচাতেই এ উদ্যোগ।
আড়ংয়ে যেতে হলে ক্রেতাদের প্রথমেই অনলাইনে স্লট বুকিং দিতে হচ্ছে। প্রবেশ পথেই থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে ক্রেতাদের শরীরের তাপমাত্রা মেপে ভেতরে ঢোকানো হচ্ছে। এরপর হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ধোঁয়ানো হচ্ছে হাত। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সঙ্গে রাখার কথা বলা হলেও দেখা হচ্ছে না সেটি।
আড়ংয়ের আউটলেটগুলোতে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। কর্তৃপক্ষ কিছুক্ষণ পরপর হ্যান্ড মাইকের মাধ্যমে ক্রেতাদের দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করার কথা বললেও মানতে চাইছেন না কেউ। ক্রেতারা বলছেন কেনাকাটা করতে এসে এত সচেতন হওয়া সম্ভব না।
আড়ংয়ের অনলাইন শপে পণ্য অর্ডারের সপ্তাহখানেক পরও তা হাতে না পেয়ে এবং অর্ডারটি আড়ং কর্তৃক বিনা নোটিশে ক্যানসেল হয়ে যাওয়ায় আড়ংয়ের মিরপুর আউটলেটে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করতে গিয়েছিলেন একটি সেবা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম। আড়ং থেকে ফিরে তার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘ওখানের সিস্টেম ভালো। কিন্তু ক্রেতাদের দূরে রাখাটা সম্ভব নয়। হ্যান্ড মাইকে কিছুক্ষণ পরপর সরে যাবার ঘোষণা আসলেও সেটা মানছেন না কেউ। আসলে এই পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ আড়ং খোলার সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকলেই পারত। কারণ না খুললে কিন্তু আমি বা অন্য ক্রেতারা সেখানে যেতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যখন সেখানে ছিলাম প্রায় ১৭০ জনের বেশি ক্রেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আর আড়ংয়ের সেলসম্যানরাতো রয়েছেই। এক সাথে এত মানুষ এক জায়গায়। কাজেই যত ব্যবস্থাই নেওয়া হোক ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।’
সন্তানের প্রথম ঈদ, সেজন্য আড়ংয়ের গুলশান আউটলেটে পোশাক কিনতে গিয়েছিলেন চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট তারেক মামুন। তিনি বলেন, ‘ক্রেতারা একটু পরপর ভুলে যায় সামাজিক দূরত্বের কথা। কিছুক্ষণ পরপরই দেখা যায় স্বাভাবিক সময়ের মতো এক জায়গায় অনেক ক্রেতার ভিড় হয়ে যায়। কর্তৃপক্ষ মাইকে বারবার সচেতন করতে থাকলেও কেউ মানতে চায় না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দীন রিপন বলেন, ‘লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ মার্কেট বন্ধ। সেজন্য বাধ্য হয়ে সেদিন আড়ংয়ের ধানমন্ডি-২ শাখায় গিয়েছিলাম অতি প্রয়োজনীয় দুটো জিনিস কিনতে। সেখানে গিয়ে ১০ মিনিট থেকেই কাজ শেষ করে চলে আসছি।’
সময়টা যেহেতু খুব ঝুঁকিপূর্ণ আমরা কখন, কোথায়, কীভাবে আক্রান্ত হচ্ছি সেটা জানতে পারছি না। আর তাই খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কাউকে বের না হতে পরামর্শ দেন রিপন।
লকডাউনের এ সময়টাতে আড়ং খোলার সিদ্ধান্তকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার আশরাফুল আলম বলেন, ‘আড়ংয়ের সঙ্গে প্রায় ৬৫ হাজার কারুশিল্পীর জীবিকা জড়িত। তারা এবং তাদের পরিবার সম্পূর্ণভাবে আমাদের ওপর নির্ভরশীল। এটি একক ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নয়। ব্র্যাকের একটি প্রতিষ্ঠান। এর মুনাফাও পুরোপুরি আড়ংয়ের বিনিয়োগ ও সামাজিক কল্যাণে ব্যবহৃত হয়।’
যারা করোনাভাইরাস বহন করছেন তারা জানছেন না যে তারা নীরব বাহক। সেক্ষেত্রে আপনারা এবং আপনাদের বিক্রয় কর্মীরাও ক্রেতাদের মাধ্যমে ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। এমন প্রশ্নের জবাবে আশরাফুল আলম বলেন, ‘আমাদের বিক্রয়কর্মীরা ক্রেতাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করছে। তারা অন্তত তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখছে। আর কোথাও ক্রেতাদের জটলা দেখলে আমরাও কিছুক্ষণ পরপর মাইকিং করছি যাতে তারা দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটা করেন।’
আড়ংয়ের এ ব্যবস্থা ঠিক কতটা পর্যাপ্ত। কারণ যারা কেনাকাটা করতে যাচ্ছেন একটা পর্যায় পর দেখা যাচ্ছে তারা সামাজিক দূরত্বের কথা ভুলে একে অপরের খুব কাছাকাছি চলে আসছেন। এ প্রশ্নের উত্তরে প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার বলেন, ‘যাদের এমন জটলা দেখছেন তারা বেশিরভাগই আত্মীয়। আমাদের অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে একসাথে দুজন করে ঢুকতে পারছে। দুজন একসাথে ঢুকছে। দেখা যাচ্ছে ভেতরে সেখানে গিয়ে তাদের আরও দুজন আত্মীয়ের সাথে দেখা হয়ে গেল। সেক্ষেত্রে তারা একত্র হয়ে কেনাকাটা করছে।’
অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমি নিজে আউটলেটে গিয়ে আমাদের ক্রেতাদের সচেতন করেছি। কোনো কোনো আউটলেটে গিয়ে একসাথে একাধিক ক্রেতা দেখলে আমি তাদের অনুরোধ করেছি নিরাপদ দূরত্ব রেখে কেনাকাটা করতে। প্রত্যুত্তরে ক্রেতারা বলেছেন, “আমিতো আমার হাজবেন্ডের সাথে এসেছি।” আবার অনেকে বলছেন, “ওতো আমার বোন আমরা একসাথেই এসেছি।”
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আউটলেটে এসে ক্রেতারা যাতে আক্রান্ত না হন সেজন্য আমরা সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছি। আউলেটগুলো প্রতি ঘণ্টায় জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। যেসব পণ্য ক্রেতারা ধরে দেখছেন সেগুলো জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া আমাদের কর্মীরা যারা কাজ করছেন তাদের জন্য আমরা আমাদের নিজস্ব ট্রান্সপোর্টের মাধ্যমে যাওয়া-আসার ব্যবস্থা করেছি।’
গত ১০ মে আড়ং তাদের ২১টি আউটলেটের মধ্যে ১৭টি আউটলেট খুলেছে।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন